সুভাষচন্দ্র বসু – নেতাজী – ভগবানজী সংশয়- নিঃসংশয়

বিজয় কুমার নাগ

আমাদের জীবনে এটি একটি ঘটনা। যে ঘটনার বিস্তৃতি প্রায় চার দশকের। বিষয়টি নিয়ে এভাবে প্রত্যক্ষ প্রতিবেদনের প্রয়োজন হবে ভাবিনি। কিন্তু সম্প্রতি যে-সব ঘটনা ঘটছে যে আলাপ-আলোচনা চলছে তার প্রেক্ষিতে কিছু নিবেদন, কিছু উদ্‌ঘাটন জরুরি হয়ে পড়েছে। আমার এ বক্তব্য কোনো কিছুকে প্রতিপন্ন করতে নয়। প্রত্যক্ষদর্শী এবং সেই বিরাট কর্মকান্ডের সঙ্গে যৎসামান্য প্রত্যক্ষ যে সংযোগ তারই সুবাদে এই প্রতিবেদন। আমাদের সংঘ-জননী বিপ্লবী দেশনেত্রী লীলা রায়ের স্নেহলালিত বলেও এক মহাজীবনের অপ্রত্যাশিত স্নেহ-আশীর্বাদ লাভের সুযোগ ঘটেছিল। তার মর্মকথাটি বলা দরকার। ‘জয়শ্রী’তে কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ আলোচনা হয়নি। গত পৌষ ১৪১০ সংখ্যায় সম্পাদকীয়তে প্রসঙ্গটির ইতিবৃত্ত কিছুটা প্রকাশ করা হয়েছে। নেতাজীর তথাকথিত বিমানদুর্ঘটনা ও তথাকথিত মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের জন্য মাননীয় বিচারপতি মনোজকুমার মুখার্জীর নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে তাতে যাঁরা deponent রয়েছেন, আমি তাঁদের মধ্যে নেই। কিন্তু ভগবানজী বা গুমনামী বাবার প্রসঙ্গে আমাকে সাক্ষ্য দিতে কমিশন থেকে আহ্বান করা হয়েছিল। দীর্ঘ সময়ের সে সাক্ষ্য কমিশনে লিপিবদ্ধ হয়েছে। বিপ্লবী দেশনেত্রী লীলা রায় ও সুভাষচন্দ্র নেতাজী সন্ন্যাসী Leader-এর সংযোগ ১৯৬৩ সাল থেকে তাঁর অজ্ঞান অবস্থার পূর্ব পর্যন্ত এবং তার পরও র অনুগামী-অনুসারীদের সে যোগসূত্র অক্ষুণ্ণ ছিল। বিপ্লবী দেশনেত্রীর অবর্তমানে সে দায়িত্ব পালনের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিপ্লবী সুনীল দাস। তাঁরা কোনো সময়ই বিষয়টি লোক সমক্ষে প্রত্যক্ষভাবে প্রচার করেননি। কারণ তাঁকে নিয়ে এই আলোচনা তাঁর ছিল বিধি নিষেধ। সেই হুকুমও কঠিনতরভাবে পালিত হয়েছে। নৈমিষারণ্য বা নিমসার এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন অঞ্চলে যে সন্ন্যাসী অবস্থান করেছেন তাঁকে সুভাষচন্দ্র নেতাজী ভিন্ন দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি বলে এঁরা মনে করেননি। নেতার নির্দেশ পালন করে তা তাঁরা প্রকাশ করেননি। মুখার্জী কমিশন, ফৈজাবাদের ট্রেজারি থেকে যে কাগজপত্র পেয়েছেন তাতে তাঁরা এই যোগাযোগের গভীরতা দেখেছেন।

আমি সুভাষচন্দ্রকে দেখিনি। কিন্তু বাল্যবয়স থেকে তাঁর সম্পর্কে গভীর আকর্ষণ ও তাঁর জীবনের নানা ঘটনাবলী সম্পর্কে এতটাই ওয়াকিবহাল যে তিনি আমার কাছে সদা প্রত্যক্ষ। কিন্তু কথা সেটা নয় সন্ন্যাসী ভগবানজী বা মহাকাল আমাদের বৈঠকে যেসব কথা বলেছেন- যাকে সুভাষচন্দ্র- নেতাজীর জীবনের যোগসূত্রটিকেই ব্যক্ত করে – এই ব্যক্তিত্ব কোনো বিচ্ছিন্ন সত্তা নয়- তাঁর এই পূর্বাশ্রমের বহু প্রসঙ্গ তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আমাদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন যা লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। বৈঠকের তারিখ ও সময় যেমন লিপিবদ্ধ হয়েছে সেই অনুযায়ী উল্লেখ থাকছে।

বস্তি। ২৯.৯.১৯৭১, সন্ধ্যা ৭-৪০ মিনিট সোমবার। পুরানী

‘এতদিন তোমরা জানতে রায় বাহাদুর অমুকের ছেলে, অমুক জননীর ছেলে, মা জননীর সুবি তোমাদের কিছু। তারপর জানলে দেশবন্ধুর magic wand ঘুরিয়ে দেবার ফলে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঢুকে পড়ল। তা ছাড়াও হয়ত দু-দশজন লোক হঠাৎ জেনে ফেলেছে এ সবাইকে লুকিয়ে সাধনা করে। আবার হঠাৎ কেউ জেনেছে দু-চারজন তান্ত্রিক ওর সাথে দেখা করে পরামর্শ দেয়। তারপর বিদেশে গেছে, তারপর একটি Govt-এর Supreme Command। তার পর মরে গেছে বা অদৃশ্য হয়েছে। তারপর জানলে সে জ্যান্ত ও মরেনি। এখনও অনেকে দেখেছে জ্যান্ত।…

২. অক্টোবর ১৯৭৬, শনিবার, নবমী, স্থান পুরানী বস্তি।

…এদিকের বীজটা দৌলতপুর যাওয়ার জন্য হয়ে গেল ওখানে গিয়েই এই পর্দার আড়ালে কী আছে, এরকম ac-tivity আছে জানতে পারলুম। নিয়ে গিয়েছিলেন মাস্টার মশাই। তখন আমার মাথা এদিকটায় ভোঁতা ছিল। Magazine-এ লেখা, ইত্যাদি সবই আমাকে করতে হত। আর Prof. Oaten ছিলেন এই magazine-এর Chief। লাইব্রেরিতে ঢোকা এবং বেরুনো এরই মধ্যে ঘটনা হয়ে গেছে। রাতের অন্ধকারে অত্যন্ত প্রণম্যা পূজ্যা ঘটনা জানালেন এবং বলে পাঠালেন এই ব্যাপার হয়েছে ‘সুভাষ যেন বাঁচায়।’ প্রথম শুনে মুখ থেকে বেরিয়েছিল- সে কি? ছেলেমানুষ তো ছিলুম, ভালো বল মন্দ বল তখন একটা আদর্শ ছিল। ‘সুভাষ কে বলিস্ ওকে যেন বাঁচায়’-সেই যে আমার মুখ বন্ধ হল আর কেউ খোলাতে পারল না। পরমপূজ্য স্যার আশুতোষ তাঁকে বার বার প্রণাম করি, তিনি বার বার চেষ্টা করেছিলেন আমি কিছু বলি। কিন্তু immature মনে বার বার ধ্বনিত হচ্ছিল ‘আমার ছেলেকে বাঁচা’- সুতরাং একচুপ আর হাজার চুপ। মহাভারতে পড়েছিলুম যেখানে সত্য কথা বললে মহা অনিষ্ট হবে, কারো প্রাণ যাবে সেখানে মিথ্যা না বললেও সত্য বললে সর্বনাশ হচ্ছে তথা মুখ বন্ধ করে থাকবে। Keep quiet। যদি কোনোদিন হঠাৎ উদ্দাম স্রোত বয় তা হলে চুপি চুপি লিখে দেব তিনি কে ছিলেন। সুভাষ তো ফেঁসে গেল আর একদিন তিনিই মা জননীর কাছে কেঁদে বললেন। ‘বাবা একেবারে ক্ষেপে গেলেন।… “অমন ক্ষেপা তিনি

কোনোদিন ক্ষেপেননি। ‘আমাকে বলতে কি হয়েছিল?’ উনি জানতেন এর মুখ দিয়ে কিছু বের হবে না। ‘আমাকে বললে তো কিছু হত না, আমি আকাশ-পাতাল এক করে দিতুম, আমি যেতুম স্যার আশুতোষের কাছে, চুপি চুপি বলতুম।”…. (১৫ অক্টোবর ১৯৭৫, একাদশী)।

২৭ জানুয়ারি ১৯৭৭ বৃহস্পতিবার, বেলা ১টা

‘বর্তমান রূপরেখায় এভাবে দেখাসাক্ষাতের সুযোগ আর নেই। এই স্মৃতি অনেক। এর পরে যে রূপরেখা আছে তাতে টেনেটুনে থেকে যাও, তোমাদের লোকসান না করে।’ আর বোধহয় এ ধরনের বৈঠকের সুযোগ হবে না। তাই টেনেটুনে থেকে যাও, তোমাদের লোকসান না করে।’ 

‘আমাদের সময়ের যে ঠাকুর্দার থলে, ঠাকুরমার ঝুলি, জাপানী রূপকথা, পারস্যের রূপকথা, উদাসীন রাজকুমারীর কথা, আরব্য উপন্যাস- চাই।’

‘বর্তমান Where abouts কোথাও ব্যক্ত হবে না। নির্দেশ ছাড়া লেখাগুলি লিখে যাবে।’

‘কেউ কি নিজের হৃদয়ের উপর রাগ করতে পারে? তোমরা তো আমার হৃৎপিণ্ডের component আজও।’

“অনিলবাবুর পরে শ্রীযুক্তা রায় মৃতভূতের (Dead Ghost) এই জীবনে Mrs Roy, Lee, কেমন করে হল Lee কাকে বলে জানেন কি? আমি নিজে মিথ্যে বলিনে এই যে Lee বলে ডাক, জানেন কি কেন? জাহাজের যেদিক থেকে তীব্র হাওয়া বা জলের ঝাপটা লাগছে তা থেকে বাঁচবার জন্য Lee খোঁজা হয়।… আমার বর্তমান পরিস্থিতিতে আরকরে দাঁড়াবার জন্য Lee দাঁড়িয়ে আছে, Lee Ward রয়েছে আমার সামনে।’…

‘মধ্যে মধ্যে তোমার মধ্যে থেকে এমন কতকগুলি মানসিক gesture বের হয় মনে হয় সমস্ত হৃদয়খানিই তোমার মধ্যে রেখে দিই।’

‘আমি হারিয়ে যাচ্ছি তোমরা কথা বলতে থাকো নইলে আমি ডুবে যাচ্ছি, ঝটপট কথা বলো আমাকে ধরে রাখো।’ “(ভগবানজী সমাধিমগ্ন হতে চলেছিলেন, তাই জাগতিক বন্ধনে তাঁকে আবদ্ধ রাখতে ঐ নির্দেশ)”

১৬.১০.১৯৭০ শুক্রবার রাত ৮টা, পুরানী বস্তি।

“তোমরা আমাকে অতীতের জের টেনে বর্তমানের সঙ্গে মেশাতে চাও, এজন্যই আমাকে ভুল বোঝ। অবশ্য অতীতেও আমার লক্ষ্য সম্বন্ধে কোনো ভ্রান্তি ছিল না যদিও জীবনের উপলব্ধি দ্বিতীয় জীবনে হয়েছে।”

তখন আমি একটা গন্ডির মধ্যে, সীমিত আবেষ্টনের মধ্যে ছিলাম। তা সত্ত্বেও অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে একেবারে সাফ পরিষ্কার Programme-এর জ্ঞান ছিল। অতীতের বর্তমানের এবং ভবিষ্যতের কী সম্বন্ধিত রূপ, আমার জীবনের লক্ষ্য, আমার জীবনের কোন্ কোন্ জিনিসের সমাবেশ হওয়ার অবিসম্ভাবিতাও আমি জানতুম, এও জানতুম আমাকে আমার নিজেকে জানতে হবে, mankind-কে জানতে হবে, পৃথিবীকে জানতে হবে। নইলে আমার জীবন যেজন্য সেটা পুরণ করতে সহায়ক হবে না। সংকীর্ণ আবেষ্টনের মধ্যে তোমাদের আকর্ষণের গণ্ডির মধ্যে থাকাকালেও জানতাম আমাকে আগামীকালের দ্রষ্টা ও নির্দেশক হতে হবে। এই মানব জীবনের এই পৃথিবীর, দেশের ও জাতের ক্রমোন্নতির যে বিধি নির্দিষ্ট Laws দ্বারা con-trolled এবং চালিত, এবং সেই Law-টিকে জানতেই হবে এবং আমি জানবই এটা আমি তখনই জানতাম। এবং সেই দেশ, জাতি, মনুষ্যজাতি এবং World-এর progress, অগ্রগতির কারণ যে Laws দ্বারা চালিত এবং regulated সেই Laws আমাকে জেনে দেশ জাতি mankind-কে চালাতে হবে। এই যে লক্ষ্য, এই যে ধ্যেয়, এই আদর্শ এবং এই যে কর্ম এ জিনিস একটা বিরাট জাতিকে নিয়ে মিলিয়ে করেছি। প্রথম এটি ক্রিয়মাণ হবে through India। তারপর ধীরে step by step অকুণ্ঠ অবিচলিত এবং অজেয় গতিতে এটা ছড়িয়ে পড়বে দিক দিগন্তে।

Even then I was convinced of my mission and the idea for which I took this path। ভুল আমার তখনও ছিল না এখনো নেই।

Khosla Commission

…. সুনীলকে (সুনীল দাস) বুঝিয়ে বলে দেবে, সে যেন ৫জন MP-কে দিয়ে এই enquiry-কে bye Lane চলতে না দেয়। তিনি বেঁচে আছেন অথবা মরে গেছেন সেটা enquiry-র প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য নয়। প্রথম এ প্রধান উদ্দেশ্য তাঁর মৃত্যু সম্বন্ধে যত report বেরিয়েছে তার সম্পর্কে সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার করা ও তার মধ্যে যদি কোনো সারবস্তু থাকে তা গ্রহণ ও বর্জন করা।

Two Factors

1) Plane Crash at Taipeh

2) না, Submarine-এ চলে গেছেন।

১. ক) No যাঁরা বলছেন তাঁদের উপর ভার পড়বে তা প্রমাণ করা। এ কথা যাঁরা বলবেন তাঁদের prime করে দেওয়া দরকার অন্যদের ভাঁওতায় আপনারা আসবেন না।

খ) Taipeh-তে যে Crash হয়নি তা তাঁরা বলে দেবেন। কাগজপত্র যেখানে যেখানে স্তুপ করে ভরা রয়েছে তা দেখতেই তো ৩ মাস লাগবে।

গ) এখন তো p-form নেই। সত্যনারায়ণবাবুকে ডেকে বলে দিতে হবে, আপনার লিখিত দলিল সত্ত্বেও এঁরা অত্যন্ত বেহদ্ বেতমিজের ব্যবহার করেছেন। ওঁর Taipeh Chapter টিতেযা যা লিখেছেন, সে সব প্রমাণিত করে ওঁর নিজের সততা জগতের সামনে তুলে ধরা প্রমাণ করা লাভও বটে ধর্ম-কর্তব্যও বটে। সুতরাং Commission যখন যাবে তার মাসখানেক পূর্বেই তিনি যেন চলে যান ও Old Contact-দের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এইটেই enquiry-র উদ্দেশ্য। যদি প্রমাণিত হয় কোনো crash হয়নি তাহলে খোঁজ হবে আগে চলো, এবং এই খোঁজ প্রমাণিত করবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এই এই প্রমাণ রয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে তার পক্ষে যদি প্রমাণ উপস্থিত করা না যায় তবে তার অর্থ জীবিত।

ঘ) যদি Submarine-এ গিয়ে থাকেন, এই source এ মৃত্যু অথবা জীবিত থাকার source রহস্যাবৃত্ত থেকে যাবে।

এই হল কমিশনের উদ্দেশ্য।

India- boundary-র ভিতর তাকাবার tendency-টাই যেন কমিশনের মাথায় না ঢোকে। Un-obtrusively এই কমিশনের গতিবিধি সেই দিকে চালিত করতে হবে। ৫১জন নিয়ে তো advisory and assiting committee হল। কাকে assist করছেন? Indira-কে? খোসলার হাত Indira-রই হাত। খোসলার আঙুল ইন্দিরারই আঙুল। কাজেই ইন্দিরার কলমই খোসলা ধরেছেন।

১২.১০.১৯৭০ রাত ৮টা ২০ মিনিট।

Mongolia – বৈকাল হ্রদ- অনেকবার শুনে শুনে খেয়াল হয়নি। হঠাৎ একদিন শুনলুম (Dead Ghost শুনল)

মহাকাল স্তোত্র। এটা twisted হয়ে গেছে।

১৪.১০.১৯৭০ লক্ষ্মীপূজা, রাত ৮-২০ মিনিট।

আমি কচিৎ কখনো নিজের পিঠে যাই। আমি তো শ্রীশ্রী সারদা পীঠের কিনা! বস্তি।

১৬.১০.১৯৭২ সোমবার ৮-৩০ মিনিট রাত। পুরানী

….ঠাকুরের কথামৃত এও তো নাগালের বাইরে করে দিলে। তাঁর কথামৃতের বর্তমান যে রূপ এটা তো গেল। ম’লিখিত ৫ খণ্ড অনেক পুরনো বাড়িতে পাওয়া যায় খুঁজে বের করতে পার? (কথামৃত সে সময় অর্থাৎ ১৯৭২ সালে যে সংস্করণ পাওয়া যেত তার মুদ্রক ছিল লোকসেবক প্রেস, মূল আদি সংস্করণ থেকে তা নানা অংশ বিচ্যুত, যাঁর এইসব গ্রন্থ গভীর অভিনিবেশ সহকারে পাঠ তিনি এই ভুলে ভরা, নানা অংশ বাদ দেওয়া সংস্করণ বরদাস্ত করতে পারতেন পৌষ-মাঘ ১৪২৭

না। পুরানো ৫০/৬০ বছর পূর্বের সংস্করণ সংগ্রহ করে দেওয়া হয়।)

২৮.১০.১৯৭৪ সোমবার রাত ৯-১৫ মিনিট।

…শরৎ গ্রন্থাবলী chapter and verse উড়ে গেছে। Celebrated genunine-দের লেখা edit করা আমার দুচক্ষের বিষ।

(এম. সি. সরকার থেকে প্রকাশিত শরৎ গ্রন্থাবলী তাঁকে দেওয়া হয়েছিল, সব ফেরত পাঠিয়েছিলেন, এই ধরণের পরিচ্ছেদ ও অংশ বাদ দেওয়া মুদ্রণে। তাঁর কাছে perfec-tion হচ্ছে মূল কথা)

২৩.১০.১৯৭৪ মহাষ্টমী, বুধবার রাত ১০টা।

…ভালোবাসা, প্রেম, স্নেহ এ যে কী জিনিস, এর সত্য মর্ম সেই জানে যে এসব থেকে নির্বাসিত। তোমরা কিবুঝবে ‘এ বোঝা’ তোমাদের বোঝা সম্ভব নয়। (ভগবানজী হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন বলতে বলতে) আমি যে বাঙালি, তার পর আবার মহান।

১০.১০.১৯৭০ বিজয়া দশমী, রাত ১০-১০ মিনিট।

….এটা সত্য কথা আমি কাউকে ভালোবাসি না, আমি ভালোবাসতে জানিই নে। শুধু একটি হিসেব মনে রেখে চলছি…এ জীবনে একটা জিনিসের উপরই আমার নজর রাখতে হবে যে কী আমি দিতে পারিনি। কী আমি পাইনি এর হিসেব রাখা আমার এ জীবনের কাজ নয়। আমার এ জীবনের কাজ হল, কী আমি পেয়েছি, কী আমি দিতে পারিনি এখনো; ব্যস ছুটি।

ভগবানজীর সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ হয়েছিল। যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাঁর দর্শনে যেতেন এবং যাঁরা আজ প্রয়াত তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্য: বিপ্লবী লীলা রায়, মহারাজা ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, সুরেশচন্দ্র বসু, সুনীল দাস, সমর গুহ, ডা. পবিত্রমোহন রায়, আশুতোষ কালী, শৈল সেন, অনিল দাস, কবিরাজ কমলাকান্ত ঘোষ, সন্তোষ ভট্টাচার্য, শৈলেন্দ্র সুন্দর দাস। এছাড়া স্থানীয় ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি যোগাযোগ রাখতেন যার পরিচয় নিশ্চয়ই কমিশনে প্রাপ্ত কাগজপত্রাদিতে রয়েছে। যোগাযোগ ছিল আনন্দময়ী মা, স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী প্রমুখদেরও।

এই প্রতিবেদনের উপান্তে এসে বলা যায় সুভাষচন্দ্রের অতীত জীবনের যে সব ঘটনা এবং ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের নানা উল্লেখ এখানে দেওয়া হল তার পরিপ্রেক্ষিতে সংশয়দীর্ণ ব্যক্তিরা নিঃসংশয়ের ভূমিতে পদার্পণ করবেন। শ্রীরামকৃষ্ণের ঈশ্বর উপলব্ধি ও দর্শনের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র নেতাজী-ভগবানজীর অভিন্নতা হয়তো বা তুলনীয়। বুদ্ধি বিচার বিশ্লেষণের উর্ধ্বে এক বোধময় পরম অনুভব।

সংযোজন ও প্রাসঙ্গিক কথা।

ক. বিপ্লবী সুনীল দাসের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র-নেতাজী-ভগবানজীর সাক্ষাৎকারে লিপিবদ্ধ।

১৯.১০.৬৫ (৭) মাষ্টারমশাইয়ের influence আমার

ওপর সব চাইতে বেশি কেন জান? বেণীবাবুই আমার জীবনের মোড় ফেরান। concentration প্রকৃতিকে দেখা, প্রকৃতিকে ভালোবাসা তার থেকে শক্তি সংগ্রহ করা। (এই সময় ভগবানজী বেণীমাধব দাসের একটি ফোটো চেয়ে পাঠান এবং সে সময় তাঁর কন্যা বিপ্লবী বীণা ভৌমিক (দাস)-এর কাছ থেকে বেণীমাধববাবুর ফটো এনে তাঁর কাছে পাঠানো হয়। যতদূর মনে পড়ে ফৈজাবাদ থেকে কমিশন সে ফটোগুলি এনেছেন)।

Bosom friend যদি বল হেমন্ত। বাড়ির লোক ও অনেকেই চটে যেত। বাবা-মা-র একটা ফটো দেখেছি কোন্ বইতে যেন। বাবা ছড়ি হাতে। যদি non breakable glass-এ বাঁধিয়ে পাঠাতে পার কৃতজ্ঞ থাকব। (ছবি, পবিত্রকুমার ঘোষ প্রণীত সুভাষচন্দ্র ১ম খণ্ডে ছিল, নির্দেশমতো ফোটো বাঁধিয়ে পাঠানো হয়েছিল, সে ফোটোও ফৈজাবাদ থেকে কমিশন এনেছেন বলে শুনেছি)।

২. ২০.১০.১৯৭৭।

Lee একবার লিখেছিলেন The vocabulary you use, you cannot change and this vocabulary would lead to your identification.

যে words, idiom যে concordance আপনি ব্যবহার করেন কোনো বাঙালি তা করে না। আমি লিখলুম এর diametrically opposite composition পড়ে ২০/২৫ পাতা লিখে পাঠাতে পারেন? তখন দেখব আমি change করতে পারি কিনা।

২৩.১০.৭৭ বেলা ১০টা।

একথা শেষ কথা বলছি সে কারুর দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর কোনো দিন করে নাই, করবেও না, সে যখন আসবে তখন এমনিই আসবে সেজন্য কারোর সম্মতি, অনুমতি এ সব দরকার হবে না। ঝড়ের মতো আসবে সে।

২.১০.৮৪ রাত্রি ৯-৩০টা।

ছেলেবেলা থেকে অভ্যাস কষ্ট হলেই দাঁতে দাঁত চেপে থাকতুম। একবার জার্মান ডাক্তার এসে বললেন, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি আপনি কষ্ট চাপেন কেন। আঃ উঃ তো করুন relief পাবেন।…

খ. বিপ্লবী দেশনেত্রী লীলা রায় কর্তৃক ভগবানজীর নিকট প্রেরিত হন অনিল দাস (ডাক নাম রেণু), লীলা রায়ের ভাইপো সুধীরচন্দ্র নাগ কর্তৃক শ্রীসংঘের recruit বলে তিনি লীলা রায়কে পিসিমা সম্বোধন করতেন। ১৯৩৩ সালে অনিল দাস আত্মগোপন করে জাপানের উদ্দেশ্যে শ্যামদেশে গিয়ে পৌঁছান। যুদ্ধর সূচনায় ব্যাংককে উপনীত হন ও স্বামী সত্যানন্দজীর সংস্পর্শে আসেন। নেতাজী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পদার্পণ করলে অনিল দাস সিঙ্গাপুর যান, INA সিক্রেট সার্ভিসেস-এর সঙ্গে যুক্ত হন। ১২/৭/৬৪ সালে লীলা রায় ওঁর credentials endorse করেন। তারপর দীর্ঘদিন তিনি লীলা রায়ের প্রতিনিধিরূপে ভগবানজীর নানা কাজে যুক্ত ছিলেন। ভগবানজীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর ১৮/১০/৬৪ তারিখে একটি চিঠি লিখে বিপ্লবী লীলা রায়কে জানান:

‘আমি সিঙ্গাপুর reconstruction dept. যোগদান করিবার পূর্বে তিনি আমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন এই দুই ঘটনার উল্লেখ করে তিনি লেখেন যে আমার তাঁহার voice মনে রাখা খুব স্বাভাবিক। ইহার বিশেষত্ব হল আমি পূর্বে যে কাগজ লিখে আপনাকে দিয়েছিলাম (আমার

পূর্বের জীবনী) তাহাতে Bangkok-এর interview-এর কথা লেখা ছিল কিন্তু Singapore-এর কথা লেখা ছিল না। সুতরাং ঐ interview-র উল্লেখ করার তাৎপর্য আছে তিনি ছাড়া অন্য লোকের ইহা জানবার কথা নয়।’

পুনর্মুদ্রণ, জয়শ্রী অগ্রহায়ণ ১৪১১ (December 2004)

To understand a man, you have to understand the bed-rock on which he stands and works. My most and only beloved mother was a direct initiated disciple of Paramhansa Deva. By every suck of her breast, through every kiss of her caresses, touches tender looks and words the Tattwa-Shakties of the Divine Mother flowed in and filled me. My father gave into me thoroughness and strength in service to others and fighting activeness. My Governess, first tutor-guardian gave me missionary sacrificing zeal and all-fighting and all-overcoming stamina. Collectively this I got through heredity, birth in infancy and childhood. This is my bed-rock.

Mahakal – the Warrior Saint